*** রাতের আঁধারে সাংসদের বালু মহালে এস্কেভেটরে অগ্নিসংযোগ, গাড়ী ভাংচুর ***
বিশেষ প্রতিনিধি :
সোনাগাজীতে স্বতন্ত্র সাংসদ হাজী রহিম উল্যাহর ব্যক্তিগত গাড়ী ভাঙচুর ও বালু মহালে হামলার ঘটনায় চলছে সাধারণ মানুষের মাঝে চলছে ধুম্রজাল। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা প্রতিক্রিয়া। এর আগেও বেশ কয়েকবার স্বতন্ত্র সাংসদ হাজী রহিম উল্যাহর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি শনিবার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।
গত শুক্রবার গভীর রাতে উপজেলার মুহুরী প্রকল্প এলাকায় চালিয়ে দুইটি এস্কেভেটর মেশিনে (মাটি কাটার যন্ত্র) অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা।
গতকাল শনিবার দুপুরে সোনাগাজী উপজেলা সদরে সাংসদের নিজস্ব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংসদ রহিম উল্যাহ এ ঘটনার জন্য ফেনী-২ (সদর) আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর সমর্থকদের দায়ী করেন। তিনি দাবি করেন, তাঁকে (সাংসদ) হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালানো হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঁঞা) আসনের সাংসদ রহিম উল্যাহ বলেন, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ও তাঁর কয়েকজন সমর্থকসহ উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের চর সোনাপুর গ্রামে অবস্থিত মুহুরী প্রকল্প এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর মালিকীয় বালু মহালে ব্যক্তিগত গাড়ীটি রেখে মুহুরী প্রকল্পের ব্রিজ এলাকায় যান। কিছুক্ষণ পর নদী পথে একটি ট্রলার যোগে ১৫-১৬জন এবং সড়কপথে ৬-৭টি মোটরসাইকেলযোগে ১৩-১৪ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী উপস্থিত হয়ে তাঁর বালু মহালে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা সাংসদের বালুমহালে থাকা দুটি এস্কেভেটর মেশিন (মাটি কাটার যন্ত্র) ভাংচুর করে এবং পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। বালু মহালের পাশে সড়কের ওপর থাকা সাংসদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত ল্যান্ড ক্লুজার (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫-৩৯২২) গাড়িটি ভাঙচুর করে সড়কের পাশে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। আগুন দেখে সাংসদের সাথে থাকা লোকজন ঘটনাস্থলে যেতে চাইলে দুবৃর্ত্তরা কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে ও বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। সোনাগাজী থেকে দমকল বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র সাংসদ রহিম উল্যাহ নিজেকে জেদ্দা আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর গত সাড়ে চার বছর শান্তিতে থাকতে পারেন নি। তাঁর মালিকীয় বালুমহালে আগেও তিনবার হামলা, ভাংচুর ও এস্কেভেটর মেশিন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাঁর মৎস খামার থেকে মাছ লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। উপজেলা সদরে তাঁর (সাংসদ) ওপর হামলা হয়, তাঁর ব্যাক্তিগত কার্যালয়ে গুলি করা হয়। তিনি মামলা করলেও এ যাবত একজন আসামীও গ্রেপ্তার হয়নি। উল্টো তাঁর কর্মী সমর্থকরা হামলা, মামলার শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর সমর্থকদের বাধার কারনে তাঁর নিজের এলাকায় তিনি একটি প্রকল্পের কাজও উদ্বোধন করতে পারেন নি। কি কাজ হচ্ছে, কেমন হচ্ছে-তাও পরিদর্শন করতে পারেন না।
স্বতন্ত্র সাংসদ হলেও তিনি নিজেকে এখনো আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করেন। তিনি বলেন, তাঁর ওপর হামলা কারীরাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী দেশের বাইরে থেকে কিভাবে হামলার নির্দেশ দিয়েছেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাংসদ রহিম উল্যাহ বলেন, বিদেশ থেকেও নির্দেশ দেওয়া যায়।
স্থানীয়ভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের অন্য কোন নেতার সাথে তাঁর (রহিম উল্যাহ) বিরোধ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অন্য কোনো নেতার নাম না বলে শুধু নিজাম হাজারীর অনুসারীদের কথাই বলেন।
তবে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার একাধিক লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্বতন্ত্র সাংসদ রহিম উল্যাহ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্নভাবে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তিনি রাতের আঁধারে মুহুরি প্রজেক্ট এলাকায় কেন গেলেন? এ বিষয়টি রহস্যজনক। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনায় আসতে ও প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
সাংসদের বালুমহালে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও গাড়ী ভাংচুরের ঘটনায় মামলা করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিন্তা ভাবনা করে মামলা করবেন। যেন কোন নিরপরাধী লোক হয়রানীর শিকার না হয়-সে দিকে খেয়াল রাখা হবে।
সাংসদের বালুমহালে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও গাড়ী ভাংচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
জানতে চাইলে ফেনী-২ (সদর) আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী মুঠোফোনে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই শোনেন নি। তিনি (শনিবার) বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি বলেন, সাংসদ রহিম উল্যাহর সাথে তাঁর কোন বিরোধ নেই। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে ‘আমরাই তাঁকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচিত করেছিলাম’। তাঁর সাথে বিরোধের কোন কারনও নেই।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বালুমহালে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও গাড়ী ভাংচুরের ঘটনার বিষয়ে তদন্তক্রমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
- » বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ ফেনী জেলা আহবায়ক কমিটি গঠিত
- » ফেনী বন্ধুসভার বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ
- » আমার দেশ সম্পাদকের রত্নগর্ভা মাতা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগমের মাগফিরাত কামনায় ফেনীতে দোয়া
- » গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ফেনীতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- » ফেনীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার গোপন পরিকল্পনা ফাঁস
- » জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যানের উপর হামলা, সংবাদ সম্মেলন
- » ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
- » ফেনীতে হেফাজতের দোয়া মাহফিলে আজিজুল হক ইসলামাবাদী- ‘আলেম সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হবে না’
- » ফেনীতে হাফেজ তৈয়ব রহ. স্মরণে দোয়ার মাহফিল
- » ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফেনীতে বিএনপি’র বর্ণাঢ্য বিজয় মিছিল, সমাবেশ “গণহত্যার দ্রুত বিচার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি”